খেজুরের গুড় সংরক্ষণের উপায়
১. পাত্রের নির্বাচন:
- মাটির পাত্র: মাটির পাত্রে গুড় সংরক্ষণ করা খুবই ভালো। মাটির পাত্র গুড়কে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখে এবং বায়ু চলাচলের অনুমতি দেয়।
- কাচের পাত্র: কাচের পাত্রেও গুড় সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু মাটির পাত্রের তুলনায় এতে গুড় তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যেতে পারে।
- প্লাস্টিকের পাত্র: প্লাস্টিকের পাত্রে গুড় সংরক্ষণ করা উচিত নয়। কারণ প্লাস্টিকের সাথে গুড়ের রাসায়নিক বিক্রিয়া হতে পারে।
২. সংরক্ষণের উপায়:
- গুড় সবসময় শুষ্ক ও ঠাণ্ডা স্থানে সংরক্ষণ করুন।
- আর্দ্র জায়গায় রাখলে গুড়ে ফাঙ্গাস বা ছত্রাক জন্মাতে পারে।
- গুড়কে এয়ারটাইট (বায়ুরোধী) পাত্রে সংরক্ষণ করুন।
- এটি গুড়কে বাতাস এবং আর্দ্রতা থেকে রক্ষা করবে এবং দীর্ঘদিন ভালো রাখবে।
- যদি দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণ করতে চান, তাহলে রেফ্রিজারেটরে রাখতে পারেন।
- ফ্রিজে রাখলে গুড় শক্ত হতে পারে, তবে কিছুক্ষণ বাইরে রাখলে তা আবার নরম হয়ে যাবে।
- গুড়কে কখনো সরাসরি সূর্যের আলোতে রাখবেন না।
- রোদে রাখলে গুড়ের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায় এবং এটি দানাদার হয়ে যেতে পারে।
- একসঙ্গে পুরো গুড় না রেখে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে আলাদা পাত্রে সংরক্ষণ করুন।
- এতে ব্যবহারের সময় পুরো গুড় দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
- খেজুরের গুড় সাধারণত ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করলে।
- দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করলে গুণাগুণ ও স্বাদ কিছুটা কমে যেতে পারে।
- গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া গরম ও আর্দ্র থাকে। ফলে গুড়ে ফাঙ্গাস ধরার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- বর্ষাকালে আর্দ্রতা বেশি থাকে, যা ফাঙ্গাসের বৃদ্ধির জন্য আদর্শ পরিবেশ। ফলে বর্ষাকালে গুড়ে ফাঙ্গাস ধরার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
৩. ফাংগাস দূর করার উপায়:
- গুড়ের যেসব স্থানে ফাঙ্গাস দেখা গেছে, সেই অংশটি চামচ বা ছুরি দিয়ে সরিয়ে ফেলুন।
- নিশ্চিত করুন, ফাঙ্গাসযুক্ত অংশের আশপাশের কিছুটা অংশও কেটে ফেলে দিয়েছেন।
- বাকি গুড়টিকে একটা পাত্রে রেখে রোদে দিন। রোদের তাপে ফাঙ্গাস মরে যাবে।
- এই পদ্ধতিটি খুবই কার্যকর এবং পরিবেশবান্ধব।
- ফাঙ্গাস দূর করার পর গুড় ভালোভাবে গরম করুন।
- একটি পাত্রে গুড় নিয়ে হালকা আঁচে গলিয়ে নিন।
- গরম করার ফলে কোনো জীবাণু বা ফাঙ্গাস বেঁচে থাকলে তা ধ্বংস হয়ে যাবে।
- গুড় গলানোর পর একটি মিহি ছাঁকনির মাধ্যমে ছেঁকে নিন।
- এতে গুড়ে থাকা যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কণা বা ফাঙ্গাস পুরোপুরি দূর হবে।
- যদি গুড়ের বড় অংশে ফাঙ্গাস ছড়িয়ে পড়ে বা দুর্গন্ধ অনুভূত হয়, তবে এটি ব্যবহার না করাই ভালো।
- অতিরিক্ত দূষিত গুড় শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
- যদি ফাঙ্গাসের পরিমাণ কম হলেও গুড়ের স্বাদ বা গন্ধ পরিবর্তিত মনে হয়, তবে সেটি এড়িয়ে চলা উচিত। ফাঙ্গাসযুক্ত খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
৪. অন্যান্য টিপস:
- গুড় কেনার সময় খেয়াল রাখুন যাতে কোনো ফাঙ্গাস না থাকে।
- গুড়কে ছোট ছোট টুকরো করে রাখলে দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
- গুড়কে পানির সংস্পর্শে আসতে দেবেন না।
প্রাকৃতিক বা খাঁটি খেজুরের গুড়ে কোনো রাসায়নিক প্রিজারভেটিভ থাকে না। এ কারণে এটি ১৫-৩০ দিনের মধ্যে ফাঙ্গাস পড়তে পারে যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করা হয়। সঠিক সংরক্ষণের অভাবে মাত্র ৫-১০ দিনের মধ্যেও ফাঙ্গাস পড়তে পারে। সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে এটি ৩-৬ মাস পর্যন্ত ভালো থাকতে পারে।